তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির বিকাশে উল্লেখযোগ্য ব্যক্তিত্ব

নবম-দশম শ্রেণি (মাধ্যমিক) - তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি - তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি এবং আমাদের বাংলাদেশ | | NCTB BOOK

তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির আজকের বিকাশের পেছনে রয়েছে অনেক বিজ্ঞানী, স্বপ্নদ্রষ্টা, প্রকৌশলী এবং নির্মাতাদের অবদান। তার এবং তারহীন যোগাযোগ ব্যবস্থা, কম্পিউটারের পণনা ক্ষমতা বৃদ্ধি এবং মাইক্রোইলেকট্রনিক্সের বিকাশ বর্তমানে আইসিটিকে মুঠোর মধ্যে নিয়ে এসেছে।


আধুনিক কম্পিউটারের বিকাশ বা প্রচলন শুরু হয় চার্লস ব্যাবেজ (Charles Babbage ) [১৭৯১-১৮৭১) নামে একজন ইংরেজ প্রকৌশলী ও গণিতবিদের হাতে। অনেকে তাঁকে আধুনিক কম্পিউটারের জনক বলে থাকেন। তিনি তৈরি করেন ডিফারেন্স ইঞ্জিন। ১৯৯১ সালে লন্ডনের বিজ্ঞান জাদুঘরে চার্লস ব্যাবেজের বর্ণনা অনুসারে একটি ইঞ্জিন তৈরি করা হয়। দেখা যায় যে, সেটি সঠিকভাবেই কাজ করছে এবং পরবর্তীতে তিনি এনালিটিক্যাল ইঞ্জি নামে একটি গণনা যন্ত্রের পরিকল্পনা করেন। 


তবে গণনার কাজটি কীভাবে আরো কার্যকর করা যায় সেটি নিয়ে ভেবেছিলেন কৰি লর্ড বায়রনের কন্যা অ্যাডা লাভলেস (Ada Lovelace) (১৮১৫-১৮৫২)। মায়ের কারণে অ্যাডা ছোটবেলা থেকে বিজ্ঞান ও গণিতে আগ্রহী হয়ে ওঠেন। ১৮৩৩ সালে চার্লস ব্যাবেজের সঙ্গে তার পরিচয় হলে তিনি চার্লস ব্যাবেজের এনালিটিক্যাল ইঞ্জিনকে কাজে লাগানোর জন্য 'প্রোগ্রামিং-এর ধারণা সামনে নিম্নে আসেন। এ কারণে অ্যাডা লাভলেসকে প্রোগ্রামিং ধারণার প্রবর্তক হিসেবে সম্মানিত করা হয়। ১৮৪০ সালে চার্লস ব্যাবেজ তুরিন বিশ্ববিদ্যালয়ে তাঁর ইঞ্জিন সম্পর্কে বলবা দেন। সে সময় অ্যাডা লাভলেস চার্লস ব্যাবেজের সহায়তা নিয়ে বক্তব্যের সঙ্গে ইঞ্জিনের কাজের ধারাটি ধাপ অনুসারে ক্রমাঙ্কিত করেন। তাঁর মৃত্যুর ১০০ বছর পর ১৯৫৩ সালে সেই নোট আবারো প্রকাশিত হলে বিজ্ঞানীরা বুঝতে পারেন, অ্যাডা লাভলেস অ্যালগরিদম প্রোগ্রামিংয়ের ধারণাটাই প্রকাশ করেছিলেন।

 

বিজ্ঞানী জেমস ক্লার্ক ম্যাক্সওয়েল (James Clerk Maxwell ) (১৮৩১-১৮৭১) তড়িৎ চৌম্বকীয় বলের ধারণা প্রকাশ করেন। তড়িৎ চৌম্বকীয় বলের ধারণা বিনা তারে বার্তা প্রেরণের সম্পনা সৃষ্টি করে ।

 

বিনা তারে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে বার্তা প্রেরণে প্রথম সফল হন ৰাঙালি বিজ্ঞানী জগদীশচন্দ্র বসু (Jagadish Chandra Bose) (১৮৫৮–১৯৩৭)। ১৮৯৫ সালে জগদীশচন্দ্র বসু অতিক্ষুদ্র ব্যবহার করে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে তথ্য প্রেরণে সক্ষম হন। কিন্তু তাঁর এই আবিষ্কার প্রকাশিত না হওয়ায় সার্বজনীন স্বীকৃতি পায়নি।

বেতার তরঙ্গ ব্যবহার করে একই কাজ প্রথম প্রকাশিত হওরায় সাবজনীन তি পান ইতালির বিজ্ঞানী গুগলিয়েলমো মার্কনি (Guglielmo Marconi ) (১৮৭৪-১৯৩৭)।
এ জন্য তাকে বেতার যন্ত্রের আবিষ্কারক হিসাবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়। বিশ শতকে ইলেকট্রনিক্সের বিকাশের পর প্রথম যুক্তরাষ্ট্রের আইবিএম কোম্পানি মেইনফ্রেম কম্পিউটার তৈরি করে। পর্যায়ক্রমে ১৯৭১ সালে মাইক্রোপ্রসেসর আবিষ্কৃত হলে সাশ্রয়ী কম্পিউটার তৈরির পথ সুগম হয়।


বিশ শতকের ষাট-সত্তরের দশকে ইন্টারনেট প্রটোকল (Internet Protocol) ব্যবহার করে আরপানেট (Arpanet) আবিষ্কৃত হয়। বলা যায়, তখন থেকে নেটওয়ার্কের মাধ্যমে কম্পিউটারসমূহের মধ্যে আন্তঃসংযোগ বিকশিত হতে শুরু করে। আর এ বিকাশের ফলে তৈরি হয় ইন্টারনেট। ১৯৭১ সালে আরপানেটে ইলেকট্রনিক মাধ্যমে পত্রালাপের সূচনা করেন আমেরিকার প্রোগ্রামার রেমন্ড স্যামুয়েল টমলিনসন ( Ramond Samuel Tomlinson)। তিনিই প্রথম ই-মেইল পদ্ধতি চালু করেন।

 

মাইক্রোপ্রসেসরের আবির্ভাবের পর বিশেষ করে, যুক্তরাস্ট সেটি ব্যবহার করে পার্সোনাল কম্পিউটার তৈরির কাজ শুরু হয়। স্টিভ জবস (Steve Jobs) (১৯৫৫-২০১১) ও তার দুই বন্ধু স্টিভ ওজনিয়াক (Steve Wozaniak) ও রোনাল্ড ওয়েইন (Ronald Wayne ) ১৯৭৬ সালের ১লা এপ্রিল অ্যাপল কম্পিউটার নামে একটি প্রতিষ্ঠান চালু করেন। প্রতিষ্ঠানটি বর্তমানে বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ প্রতিষ্ঠান। অ্যাপলের হাতেই পার্সোনাল কম্পিউটারের নানান পর্যার বিকশিত হয়েছে।

 

অন্যদিকে ১৯৮১ সালে আইবিএম কোম্পানি তাদের বানানো পার্সোনাল কম্পিউটারের অপারেটিং সিস্টেম তৈরি করার ान William Henry Grates অথবা Bill Gates (জন্ম অক্টোবর ২৮, ১৯৫৫) ও তাঁর বন্ধুদের প্রতিষ্ঠান মাইক্রোসফটকে দায়িত্ব দেয়। বিকশিত হয় এমএস ডস এবং উইন্ডোজ অপারেটিং সিস্টেম। বিল গেটস প্রতিষ্ঠিত মাইক্রোসফট কোম্পানির অপারেটিং সিস্টেম সফটওয়্যার দিয়ে বর্তমানে পৃথিবীর অধিকাংশ কম্পিউটার পরিচালিত হয়।



১৯৮৯ সালে স্যার টিমোথি জন বার্নাস নি (Sir Timothy John Berners-Lce) ( জুন ৮, ১৯৫৫) নামে একজন ব্রিটিশ কম্পিউটার বিজ্ঞানী হাইপারটেক্সট ট্রান্সফার প্রটোকল (http) ব্যবহার করে তথ্য ব্যবস্থাপনার প্রস্তাব করেন এবং তা বাস্তবায়ন করেন। তিনি ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ওয়েবের (www) জনক হিসেবে পরিচিত। নেটওয়ার্ক প্রযুক্তির বিকাশের ফলে বিশ্বের নানান দেশের মধ্যে ইন্টারনেট বিস্তৃত হয়। ইন্টারনেটকে কেন্দ্র করে একটি শক্তিশালী অর্থনৈতিক ব্যবস্থা গড়ে ওঠে এবং বিকশিত হয় বিভিন্ন ধরনের অ্যাপ্লিকেশন সফটওয়্যার।



বর্তমান পৃথিবীর সবচেয়ে জনপ্রিয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের নাম ফেসবুক। হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মার্ক জাকারবার্গ (Mark Zuckerberg) (জন্ম মে ১৪, ১৯৮৪) ও তাঁর চার বন্ধুর হাতে সূচিত হয় ফেসবুকের। শুরুতে এটি কেবল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে আবদ্ধ থাকলেও বর্তমানে অনেকেই ফেসবুক ব্যবহার করেন। এ সংখ্যা প্রতিদিনই বাড়ছে। আমাদের বাংলাদেশের অনেকেই সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম হিসেবে ফেসবুক ব্যবহার করেন।

Content updated By
Promotion